

Dr. Mekhala Sarkar
brings a wealth of experience and expertise to her practice. With a focus on patient-centered care, she is known for her warm and empathetic approach, always taking the time to listen to her patients’ concerns. Her extensive medical knowledge and dedication to staying at the forefront of the field make her a trusted healthcare partner.
Latest Post

সহিংস শাসন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়
ঘটনা-১ : মাদারীপুরে আট বছর বয়সী শিশু ফয়েস হাওলাদারকে আছাড় দিয়ে ফেলে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দিয়েছেন এক মাদ্রাসার শিক্ষক। ওই শিশুকে তিনি উঠে দাঁড়াতে বলেন। কিন্তু সে না দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লে শিক্ষক এ ঘটনা ঘটান বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী। ওই শিশু বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি ঘটেছে ৬ নভেম্বর।
ঘটনা-২ : পারিবারিক অশান্তির জেরে শরীয়তপুরের নরিয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দেন এক মা। এ ঘটনায় দুজনকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বাকিদের উদ্ধারের চেষ্টা চলে। ঘটনাটি ঘটে ৫ নভেম্বর।
শিশুদের প্রতি সহিংস শাসন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। উপরের ঘটনাগুলো এরই দৃষ্টান্ত। কিন্তু এমন অল্পকিছু ঘটনা জানা যায়। সব খবর গণমাধ্যমে আসেও না। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু ঘরে-বাইরে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এটিকে শাসন বলে মানে। পরিবারের মা-বাবাসহ বয়সে বড়রা শিশুদের নানা কারণে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, এমনকি লাঠি, জুতাপেটাও করে থাকেন। কখনো কখনো এটি বিপজ্জনক পর্যায়েও চলে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিশুদের ওপর নির্যাতন, শারীরিক প্রহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই বিধি-নিষেধাজ্ঞার ধার ধারে না। তারা শিশুদের প্রহার ও নানা রকম শাস্তি দিয়ে থাকেÑ যা কখনো কখনো মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে শিশুর জীবন বিপন্ন করে। এ ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশু, পথশিশু, প্রতিবন্ধী শিশুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠে।
জেনে নেওয়া যাক কিছু জরিপ : প্রতি দশ শিশুর মধ্যে নয়জনই তাদের অভিভাবক বা সেবা প্রদানকারীদের দ্বারা কোনো না কোনোভাবে সহিংস শাসনের শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৯২ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৭ জনকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। আইন ও শালিশ কেন্দ্রের (আসক) ২০২৩-এর প্রথম সাত মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৯ মাসে ১ হাজার ১৫৭ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ৩১৭ শিশু। গত তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর) ১২৫ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ছয় বছরের ৩২, ৭ থেকে ১২ বছরের ২৬, ১৩ থেকে ১৮ বছরের ৫৩টি ও বয়স জানা যায়নি এমন ১৪ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া গত তিন মাসে ২২৮ শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২২-এর তথ্য অনুসারে এক বছরে ১২টি ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। এগুলো হলো যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, সড়ক দুর্ঘটনা, অন্য দুর্ঘটনা, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অপরাধে সংশ্লিষ্ট শিশু, নিখোঁজ ও পানিতে ডুবে মৃত্যু। এসব ক্ষেত্রে ২০২১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪২৬। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৪-এ। অর্থাৎ এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর হার বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনো ধরনের নির্যাতন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মেখলা সরকার বলেন, সহিংস শাসন শিশুর শারীরিক ও মানসিক- দুধরনেরই ক্ষতি করতে পারে। শারীরিক সহিংসতা বলতে আমরা যেটি বুঝি, সেটি হলো শাসনের নামে শিশুকে শারীরিকভাবে আঘাত করা। আর যেটি মানসিক সহিংসতা, সেটি হচ্ছে শিশুকে সব সময় কঠিনভাবে কথা শোনানো। তাকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করাÑ ও পারে, তুমি পারো না কেন? তার ঘাটতি নিয়ে সব সময় তাকে কটাক্ষ করা, তাকে বুলিং ইত্যাদি। এ দুটিকেই আমরা সহিংস শাসন বলে থাকি। এ দুধরনের শাসনই শিশুর বিকাশের অন্তরায়। শিশু ভুল করতে পারে, অনেক কিছুই করতে নাও পারে। সবাই তো সব পারে না। তখন শাসনের নামে তার প্রতি সহিংস আচরণ তার আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দিতে পারে। তার মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। তার সৃষ্টিশীলতা কমে যায়। নতুন কিছু করার ঝুঁকি নিতে সে দ্বিধাবোধ করে। আরেকটি বিষয় হলো, শিশুরা দেখে দেখে শেখে। যে পরিবারের মা-বাবা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ও সহিংস আচরণ করে, ওই পরিবারের শিশুরাও সেটিই শেখে। সে তখন তার আশপাশের মানুষের সঙ্গে সহিংস আচরণ করে। তখন সে কোনো কারণে রাগ হলে সেটি প্রকাশ করতে পারে না। এর প্রভাব পড়ে তার আচরণে। এ ধরনের শিশুদের মধ্যে অ্যাংজাইটি দেখা যায়। তারা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। এতে তার পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়। পরে সে আর এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। পরীক্ষার সময়ও অ্যাংজাইটির কারণে সে মনোযোগী হতে পারে না, কিছু মনে রাখতে পারে না। এটি থেকে শিশুর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। আর শারীরিক আঘাতে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে, শিশুর কোথাও কেটে-ফেটে বা ভেঙে যেতে পারে। শরীরের কোনো অঙ্গের ক্ষতি হতে পারেÑ যা তাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুও করতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতটি খুব বেশি প্রভাব ফেলে।
যে কোনো ধরনের নির্যাতন শিশু অধিকারের লঙ্ঘন এবং তা শিশুর মানসিক ও শারীরিক- দুটির জন্যই ক্ষতিকর।

কোন বয়সের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি?
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় কী? পরিবার-সমাজের ভূমিকা কী?
এসব নিয়ে সময় সংবাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠান বদ্যিবাড়িতে কথা বলেছেন সোসাইটি অব সুইসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
কোন বয়সের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি?
আমাদের দেশে সাধারণত তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটা আসলে সব বয়সিদের মাঝেই হতে পারে, শুধু একটা বয়সের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ না। এটার মূল কারণ পারিবারিক সমস্যা, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আর একটি হলো পারিপাশ্বিক বিষয়। এই তিনটি বিষয়ের যৌথ মিথস্ক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করবে কিনা সেটা নির্ধারিত হয়। অনেকক্ষেত্রেই কেউ যখন কোনো চাপ মোকাবেলা করতে না পারে তখন আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটে। তখন তারা মনে করে, এই চাপ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ আত্মহত্যা। তাই তারা এ পথ বেছে নেয়। আর আত্মহত্যার কারণের ক্ষেত্রে বলা হয়, আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত এবং মানসিক কিছু রোগের কারণেও মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের করণীয় কী:
ডা. মেখলা: এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই যেটা বলেছি, আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, আমাদের চেম্বারে প্রায়ই আমরা এমন রোগী যারা অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেয়েছে হাত-পা কেটে ডাক্তারের কাছে আসছে। তারা কিন্তু সামান্য বিষয় নিয়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। দেখেন, আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের জীবনে স্ট্রেচ থাকবেই। এটা আমাদের জীবনের একটি অংশও বটে। এজন্য এসব কিছুকে আমাদের মানিয়ে নেয়ারে যোগ্য হতে হবে। এর জন্য একাকিত্ব দূর করতে হবে। একটি শিশুর সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে। অন্যান্য ৮-১০টি শিশুর সঙ্গে মেশার ফলে সেখান থেকে নানা সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি হয়। যা তার পরবর্তী জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে। এই মেলামেশা একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। এতে সামান্য পরীক্ষায়ে ফেল বা ব্রেক-আপের মত চাপ সামলানোর ক্ষমতা তৈরি হবে তার।
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে করণীয় কী?
ডা. মেখলা: আমি প্রথমেই বলবো ছোট বেলা থেকেই বাবা-মার ভূমিকা প্রধান। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ এই আকাঙ্খা সব বাবা-মায়েরই থাকে। কিন্তু সবসময় এমন হয় না। বাচ্চাকে নানান সমস্যাও জটিলতা সামলাতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে শিশুকে শুরু থেকেই শিক্ষা দিতে হবে। সবার সঙ্গে মিশতে হবে। এটা একটা দক্ষতা। এই দক্ষতায় দক্ষ করে তুললে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে।
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আত্মহত্যা থেকে নিজে বাঁচতে হবে, অন্যকে বাঁচাতে হবে। এজন্য চাই ব্যাপক সচেতনতা। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে এ আন্দোলন শুরু হোক নিজ থেকে, শুরু হোক পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও। তবেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে আমরা পাবো সুস্থ মনন।
আপনি কি বিষন্নতায় কষ্ট পাচ্ছেন?

আপনি কি বিষন্নতায় কষ্ট পাচ্ছেন?
নীচের উপসর্গ সমূহের মধ্যে অন্তত ৫টি বৈশিষ্ট্য একটানা অন্তত ২ সপ্তাহ বা তার বেশী সময় ধরে প্রায় প্রতিদিন দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে থাকলে বুঝবেন আপনি গুরতর বিষন্নতা রোগে (Major Depressive Disorder) ভুগছেন। (তবে এই পাচটি উপসর্গের মধ্যে ১ম উপসর্গটি, অর্থাৎ বিষন্ন মন বা ২য় উপসর্গ অর্থাৎ সব কিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা অবশ্যই থাকতে হবে।
উপসর্গসমূহ:
১. মন খারাপ (শূন্য বা হতাশ বোধ করা, কান্না পাওয়া) থাকবে দিনের বেশীরভাগ সময়, প্রায় প্রতিদিনই ।
২. প্রায় সব কিছুতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা আগের মতো আনন্দ না পাওয়া।
৩. খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া (একমাসে ওজন বেড়ে যাবে বা কমে যাবে প্রায় ৫%)
৪.ঘুম বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
৫. শরীর ও মনে স্থবিরতা (কাজে কর্মে ধীর/Slow হয়ে যাওয়া) বা অস্থিরতাবোধ করা।
৬. দুর্বলতা বা কোন শক্তি না পাওয়া
৭. আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া বা নিজেকে অযোগ্য ছোট মনে হওয়া। অতিরিক্ত অপরাধবোধে ভুগা।
৮. মনোযোগ কমে যাওয়া, চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগা।
৯. আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসা।
(Ref: Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition: DSM-5)
বিষন্নতা রোগে ভুগে থাকলে চিকিৎসা নিন।
চিকিৎসায় বিষন্নতা রোগ ভালো হয়।
Psychiatrist Dr. Mekhala Sarkar