একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় কী? পরিবার-সমাজের ভূমিকা কী?
এসব নিয়ে সময় সংবাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠান বদ্যিবাড়িতে কথা বলেছেন সোসাইটি অব সুইসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
কোন বয়সের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি?
আমাদের দেশে সাধারণত তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটা আসলে সব বয়সিদের মাঝেই হতে পারে, শুধু একটা বয়সের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ না। এটার মূল কারণ পারিবারিক সমস্যা, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আর একটি হলো পারিপাশ্বিক বিষয়। এই তিনটি বিষয়ের যৌথ মিথস্ক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করবে কিনা সেটা নির্ধারিত হয়। অনেকক্ষেত্রেই কেউ যখন কোনো চাপ মোকাবেলা করতে না পারে তখন আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটে। তখন তারা মনে করে, এই চাপ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ আত্মহত্যা। তাই তারা এ পথ বেছে নেয়। আর আত্মহত্যার কারণের ক্ষেত্রে বলা হয়, আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত এবং মানসিক কিছু রোগের কারণেও মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের করণীয় কী:
ডা. মেখলা: এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই যেটা বলেছি, আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, আমাদের চেম্বারে প্রায়ই আমরা এমন রোগী যারা অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেয়েছে হাত-পা কেটে ডাক্তারের কাছে আসছে। তারা কিন্তু সামান্য বিষয় নিয়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। দেখেন, আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের জীবনে স্ট্রেচ থাকবেই। এটা আমাদের জীবনের একটি অংশও বটে। এজন্য এসব কিছুকে আমাদের মানিয়ে নেয়ারে যোগ্য হতে হবে। এর জন্য একাকিত্ব দূর করতে হবে। একটি শিশুর সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে। অন্যান্য ৮-১০টি শিশুর সঙ্গে মেশার ফলে সেখান থেকে নানা সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি হয়। যা তার পরবর্তী জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে। এই মেলামেশা একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। এতে সামান্য পরীক্ষায়ে ফেল বা ব্রেক-আপের মত চাপ সামলানোর ক্ষমতা তৈরি হবে তার।
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে করণীয় কী?
ডা. মেখলা: আমি প্রথমেই বলবো ছোট বেলা থেকেই বাবা-মার ভূমিকা প্রধান। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ এই আকাঙ্খা সব বাবা-মায়েরই থাকে। কিন্তু সবসময় এমন হয় না। বাচ্চাকে নানান সমস্যাও জটিলতা সামলাতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে শিশুকে শুরু থেকেই শিক্ষা দিতে হবে। সবার সঙ্গে মিশতে হবে। এটা একটা দক্ষতা। এই দক্ষতায় দক্ষ করে তুললে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে।
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আত্মহত্যা থেকে নিজে বাঁচতে হবে, অন্যকে বাঁচাতে হবে। এজন্য চাই ব্যাপক সচেতনতা। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে এ আন্দোলন শুরু হোক নিজ থেকে, শুরু হোক পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও। তবেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে আমরা পাবো সুস্থ মনন।